মসজিদ নাম নির্মাণ এর ব্লগ এর শুরুতেই হাদিস দিয়ে শুরু করা যাক- মসজিদ নির্মাণ সওয়াবের কাজ। হাদিসে হযরত মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ জান্নাতেও তার জন্য অনুরূপ ঘর নির্মাণ করবেন।’ -সহিহ বোখারি : ৪৫০
আমাদের মসজিদের  ইন্টেরিয়র স্হাপত্যেও আসুক ভারসাম্যপূর্ন, ট্রেডিশন আর মডার্ন আমেজ ! সেই লক্ষ্যে কিছু ধারাবাহিক টপিক তুলে ধরা হল।
আবহঃ
মসজিদের ইন্টেরিয়র ডিজাইন  হওয়া উচিত সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক আবহে। ইবাদতের উদ্দেশ্যে  মুমিন  মুসলিম বা মুসলিমাহ মসজিদে  প্রবেশ করার সাথে সাথে যেন তার দেহ ও মন জান্নাতের সুবাস,অনুভূতি আর প্রশান্তি লাভ করে এবং আত্মিক প্রশান্তিতে নামাজ আদায় করতে পারেন । নামাজ আদায় করার সময় যেন মনে হয়,জান্নাতের বাগানে নামাজ আদায় করছে। মনের ভিতর এক ভিন্ন রকম অনুভূতি অনুভব আসবে যদি পারিপার্শ্বিকতা একটু ভিন্ন হয়।
.
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের কারণে মসজিদে যেমন ঝকঝকে রোদের দেখা মেলে, তেমনি ঝম ঝম বৃষ্টি এখানে দারুণ বর্ষার আবহ তৈরি হয়। বিশেষ বাতাস চলাচল ব্যবস্থা এখানকার তাপমাত্রা রাখে নিয়ন্ত্রিত। প্রাকৃতিক আলোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকায় দিনে কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে মোঘল আমলের মসজিদ নির্মাণ শৈলিতে কিছুটা এমন ভাব ফুটিয়ে তুলা হয়েছে।
.
মসজিদে বিদ্যুতের খরচ নিয়ন্ত্রনের জন্যব্যবহার করা যেতে পারে সৌরবিদ্যুত। মসজিদের চতুর্দিকের  এলাকা গাছগাছলিতে ঘেরা থাকলে পরিবেশটা ঠান্ডা ও মনোরম লাগে।  তাছাড়া মার্বেল টাইলস সিলেকশন এও তাপমাত্রা অনেকটা ঠান্ডা ভাব বিরাজ করা সম্ভব।

.মসজিদ বেস্টনী এর সাথেই হওয়া উচিত ঘাটওয়ালা পুকুর যা মসজিদের সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়াও মুসল্লী দের অজুর পানির সু ব্যবস্থা হতে পারে পুকুর হতে।

মসজিদ কমপ্লেক্সে থাকতে পারে একটি লাইব্রেরি, কমিউনিটি কিচেন, আর্কাইভাল সেন্টার ও মিউজিয়াম।
.
আকাশের আলো (Sky light) ছাড়াও পর্যাপ্ত দিবালোক (daylight) নিশ্চিত করতে Arabic KUFIC Calligraphy Symbolic ,আলোক স্থল (light courts) রাখা যেতে পারে।

সাধারনত পেরিফেরাল কলামের (peripheral columns) উপর ভর করে মসজিদ দাঁড়িয়ে থাকে।ছাদ থেকে এলোপাতাড়ি ও বৃত্তাকার দিনের আলো প্রবেশ পথ মেঝেতে অসাধারণ ও নান্দনিক প্যাটার্ন তৈরি করে। মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে সুলতানি স্থাপত্য রীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে পারে। সনাতন পদ্ধতির ইটের ব্যবহারের সাথে সমকালীন স্থাপত্য রীতির মিশ্রনে  তৈরী হতে পারে আইকনিক বা আলট্রা মডার্ন মসজিদ।
.
সিম্বলিক বা সাংকেতিকঃ

মসজিদ সবসময়ই কিছু না কিছু সংকেত বহন করবে। মসজিদটিতে ঢোকার সময় যাতে সংকেত গুলো মানুষের চোখে পরে। আবার মসজিদটির মুল স্ট্রাকচার দেখলেও যাতে মানুষের সেগুলো চোখে পরে।
.
আলো- বাতাস (CROSS VENTILATION):

মসজিদ হচ্ছে প্রার্থনাস্থল। এখানে একসাথে অনেক মানুষ সমেবেত হয় নামাজের জন্য। আর অনেক মানুষ যেখানে উপস্থিত হবে সেকানে খুবই সাধারন ভাবে গরম হবে। আর এই গরমকে মোকাবেলা করার জন্য আমরা এসির উপর কম নির্ভর করে মসজিদটি যথেস্ট খোলামেলা রাখা দরকার। যাতে আল্লাহ প্রদত্ত আলো বাতাস খুব সুন্দর ভাবে চলাচল করতে পারে। এছাড়া অনেক অসুস্থ মুরুব্বি মসজিদে নামাজে আসেন যাদের স্বাস্থের কথা বিবেচনা করে এসি পরিহার করা উচিত।
.
মিনারঃ

মিনার মসজিদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন অংশ। কারন এই মিনার মসজিদকে একটি সাধারন ভবন থেকে আলাদা করে। তাই মিনারের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। মিনারের মুল উদ্দেশ্য থাকে আজানে শব্দ যত দুর পর্যন্ত পৌছে দেয়া যায় আর মানুষ যাতে অনেক দুর থেকে মিনারের মাথা দেখেই মসজিদের অবস্থান নিশ্চিত হতে পারে।
.
অজুখানাঃ

অজুখানা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়। অজুখানার ডিজাইন আলাদা ভাবে এবং যথা সম্ভব ওপেন রাখার চেস্টা করা উচিত। এছাড়া অজুখানার জন্য আলাদা প্লাম্বিং এর ডিজাইন করা উচিত যাতে পানি অযথা অপচয় রোধ করা যায়।
.
এছাড়াও মসজিদের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের নান্দনিক সৌন্দর্য তো আছেই।তবে গুরুত্বপুর্ন হচ্ছে ভেতরের টাইলস এর ডিজাইন। আলাদা ভাবে মসজিদের রং বা দাগের ব্যবহার না করে টাইলস এর ডিজাইন করেই কাতারের লাইন দেয়া উচিত, অল্প কিছু বই (কিতাব) সংরক্ষনের জন্য বুকশেল্ফ রাখা প্রয়োজন।
.
“শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশের আবহ তৈরীর পরিপ্রেক্ষিতকে সামনে রেখে ডিজাইনের মাধ্যমে মানুষের পার্সপেক্টিভ লাইফস্টাইল এবং দৈনন্দিন  জীবনকে প্রভাবিত করেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। সুদক্ষ ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদেরই কেবল এমন অবিশ্বাস্য প্রতিনিধিত্ব করার সক্ষমতা  আছে। ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা শুধু মানুষের দৈনন্দিন জীবনকেই প্রভাবিত করছে না বরং চূড়ান্তভাবে সমগ্র মানব অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করছে।
.
ইন্টেরিয়র ডিজাইনের  বিশেষ শক্তির এই বার্তাকে যত বেশি সূক্ষভাবে কাজে লাগানো যাবে  ততটাই বিভিন্ন পেশার মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করাও সম্ভব হবে। আপনার স্পেসের স্হাপত্য ডিজাইনের  অনিমেষ মূর্চ্ছনায় আনুন পরিবর্তনের অনুরণন।”

ইসলামের বিধানে, একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও মুসলমানের প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যেই মসজিদ নির্মিত হবে। সুনাম-সুখ্যাতি, সামাজিক প্রতিপত্তি প্রদর্শন ও প্রতিযোগিতার কারণে মসজিদ নির্মাণ উচিত নয়।
তবে মসজিদ নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা নিন্দনীয়। মহল্লাগত ও বংশীয় বিবাদের জেরে রক্ষণাবেক্ষণের সামর্থ্য না থাকার পরও মসজিদ নির্মাণ অনুচিত। গ্রামাঞ্চলে এর প্রবণতা বেশি হলেও গড়পড়তায় সারা দেশেই আলিশান মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব মসজিদ নির্মাণে উঁচু উঁচু মিনার, নান্দনিক কারুকাজ ও একাধিক গম্বুজসহ নানা বিষয় যুক্ত করার হিড়িক পড়েছে।

×